BREB উৎপত্তি ও ইতিহাস: 1977, 29 অক্টোবর বাংলাদেশ সরকার "পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড অধ্যাদেশ 1977 (Ordinance No. LI of 1977)" প্রণয়ন করে। এর মাধ্যমে বিআরইবি প্রতিষ্ঠা পায় এবং 1980 সাল থেকে কার্যক্রম শুরু করে। বিআরইবি এর মূল লক্ষ্য ছিল "গ্রামীণ এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা এবং দারিদ্র্য হ্রাস করা"।
আইনি কাঠামো: বিআরইবি সরকারের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে কাজ করে। বিআরইবি Ordinance, 1977 (LI of 1977) অনুযায়ী সংস্থাটির কার্যক্রম, উদ্দেশ্য ও কর্তৃত্ব নির্ধারণ করে।
বোর্ডের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের নিয়োগ, দায়িত্ব ও ক্ষমতা এখানে বর্ণিত। Cooperative আইন অনুযায়ী Palli Bidyut Samity গঠিত হয়। বিআরইবি সরাসরি বিদ্যুৎ বিতরণ করে না; বরং এটি পিবিএস নামে গ্রাহক-ভিত্তিক সমিতির মাধ্যমে বিদ্যুৎ বিতরণ করে। প্রতিটি পিবিএস একটি সমবায় ভিত্তিক স্বশাসিত সংগঠন। নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে BERC (Bangladesh Energy Regulatory Commission): বিদ্যুৎ ট্যারিফ, গ্রাহক অধিকার এবং অভিযোগ নিষ্পত্তিতে BERC গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
পিবিএস উৎপত্তি ও ইতিহাস: বিআরইবি প্রতিষ্ঠার পরপরই পিবিএস প্রতিষ্ঠিত হয় এবং কার্যক্রম শুরু করে। বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি একটি স্বশাসিত, গ্রাহকভিত্তিক, সমবায়মূলক বিদ্যুৎ বিতরণ প্রতিষ্ঠান। পিবিএস-এর গভীর নীতিগত পরিচালনা বিশ্লেষণ (Policy & Governance Analysis) অনুযায়ী কার্যকর সেবা, জবাবদিহিতা ও সুশাসনের প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ব্যয়ের সীমা, আয়-ব্যয়ের হিসাব, এবং প্রকল্প ব্যয়ের জন্য প্রাক-অনুমোদন বাধ্যতামূলক। World Bank ও JICA-এর মতো ডোনার এজেন্সির ফান্ড ব্যবহারে কঠোর মানদণ্ড মানতে হয়।
নীতিগত কাঠামো (Policy Framework): দৈনন্দিন অপারেশন যেমন সংযোগ প্রদান, বিলিং, লাইন মেইনটেন্যান্স প্রভৃতি নির্ধারণে নির্দেশিকা আছে। প্রতিবছর কর্মপরিকল্পনা ও বাজেট অনুমোদনের মাধ্যমে সেবা উন্নয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়। প্রশাসন বোর্ড নির্বাচনে সকল ব্যবস্থা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করে।
ট্রান্সপারেন্সি প্রতিবছর বার্ষিক রিপোর্ট ও নিরীক্ষা প্রকাশ বাধ্যতামূলক।কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও মূল্যায়ন। জনগণের অংশগ্রহণ ওপেন গ্রাহক ফোরাম, গণশুনানি ও মাসিক সভা চালু করা। পিবিএস যেহেতু জনগণের কল্যাণে কাজ করে। জনসম্পদ ব্যবহারে সততা, ন্যায়বিচার ও বিদ্যুৎ বণ্টনে সাম্য। জনগণের অধিকার নিশ্চিত করা। ভিআইপি ও সাধারণ গ্রাহকের মাঝে পার্থক্য না করা একমাত্র লক্ষ্য।
Human Resource Policy: নিয়োগ, পদোন্নতি ও প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে নীতিমালা রয়েছে। প্রশাসনিক ও পরিচালন কাঠামো (Governance Structure)। বোর্ড অব ডিরেক্টরস (Board of Directors) প্রতি পিবিএস-এর নিজস্ব বোর্ড থাকে (সাধারণত পনেরো জন), যেখানে গ্রাহক প্রতিনিধি, মহিলা সদস্য, সরকারি প্রতিনিধি ইত্যাদি থাকেন। GM হচ্ছেন পিবিএস-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, যিনি কর্মীদের নিয়ন্ত্রণ এবং বোর্ডের নির্দেশ বাস্তবায়ন করেন।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিআরইবি ও পিবিএস এর মধ্য দন্দ্ব:
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি বিদ্যুৎ বিতরণ করবে এবং পল্লী বিদ্যুতের বোর্ড পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিকে অর্থের যোগান দেবে। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করবে এবং অর্থ সঠিকভাবে ব্যবহার এর জন্য অডিট করবে। প্রত্যেকটি সমিতিতে একটি বোর্ড রয়েছে , বোর্ডের সদস্যগণ সমিতি পরিচালনার যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে। সমিতি গুলো বোর্ডের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য স্বাধীনভাবে কাজ করবে।
"পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড অধ্যাদেশ 1977 (Ordinance No. LI of 1977)" অনুযায়ী বিআরইবি এবং পিবিএস পরিচালিত হওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তবে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড এই আইনের অপব্যবহার করে দিনের পর দিন কালো আইন তৈরি করে সমিতি গুলোর ওপর নির্যাতন এবং জুলুম পরিচালনা করেন।
যেখানে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিকে বোর্ড আর্থিক সহায়তা দেওয়ার কথা ছিল সেখানে তারা নিজেরাই নিম্ন মানে মালামাল ক্রয় করে এবং সেই সমস্ত মালের উচ্চ মূল্য নির্ধারণ করে সমিতি গুলোতে হস্তান্তর করে। সমিতি গুলো উক্ত মূল্য বোর্ডের কাছে পরিশোধ করতে হয়।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি (পিবিএস) নিজ নিজ এলাকায় স্বাধীনভাবে পরিচালিত হওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে এটি বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড এর অধীন পরিচালিত হয়। পিবিএস সমবায়ভিত্তিক হলেও আর্থিক নীতি কঠোরভাবে বিআরইবি নির্ধারণ করে। পিবিএস এর নীতিমালা গুলো মূলত বিআরইবি-এর দ্বারা প্রণীত হয়, যেগুলো প্রতিটি সমিতিকে অনুসরণ করতে হয়।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মীরা মাঠ পর্যায়ে কাজ করে। গ্রাহকের সমস্যা পল্লী বিদ্যুৎ কর্মীদের নিকট উপস্থাপন করে। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সমস্যাগুলি সমাধানের জন্য বোর্ডের নিকট উপস্থাপন করলে তারা কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেন না। যার ফলে গ্রাহক প্রান্ত হতে পল্লী বিদ্যুৎ কর্মীদের লাঞ্ছনার শিকার হতে হয়। পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের এই সকল অনিয়মের বিরুদ্ধে কেউ কথা বললে তাকে চাকুরী হতে অবসান করা হয় এবং মামলা দেয়া হয়। এমনকি জেলে পর্যন্ত প্রেরণ করা হয়।

পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির দাবিগুলি যৌক্তিক। এখন সময় এসেছে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড ও সমিতি গুলোকে একই ছাতার নিচে নিয়ে এসে গ্রাহক সেবার মান উন্নয়ন করা। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি গুলোকে স্বাধীন সত্তারূপে বিকশিত করা। এ সত্যি কথাগুলি বলতে গিয়ে যারা জেল এবং জুলুমের শিকার হয়েছেন তাদের মুক্তি দান করা তাদেরকে চাকুরীতে পুনর্বহাল করা। নয়তো পল্লী বিদ্যুৎ সিস্টেমে এই বিশৃঙ্খলা শেষ হবে না
উত্তরমুছুনউক্ত তথ্য প্রদান করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ
উত্তরমুছুন