নিজস্ব প্রতিবেদনঃ-
বিদ্যুৎস্পৃষ্টে প্রাণ হারালেন, এলাকাবাসীর ক্ষোভে উত্তাল।
জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলার আদারভিটা ইউনিয়নের দক্ষিণ গজারিয়া গ্রামে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন এক অভিজ্ঞ ইলেকট্রিশিয়ান, মেহেদী হাসান (৩২)। স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, তিনি বৃহস্পতিবার দুপুরে একটি বাসাবাড়ির বৈদ্যুতিক লাইনের মেরামতের কাজ করছিলেন। কাজ চলাকালীন সময়ে আকস্মিকভাবে বৈদ্যুতিক লাইনে বিদ্যুৎ সংযোগ চালু হয়ে গেলে তিনি তড়িতাহত হন এবং নিচে পড়ে যান। হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
প্রাথমিক ধারণা ও স্থানীয় ক্ষোভ
দুর্ঘটনার পরপরই স্থানীয়দের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। অনেকে অভিযোগ করেন যে, মেহেদীর কাজ চলাকালে পল্লী বিদ্যুৎ অফিস থেকে আগাম সতর্কতা বা অনুমতি ছাড়াই লাইনে বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু করে দেওয়া হয়, যা এই মর্মান্তিক পরিণতির জন্য দায়ী।
এলাকাবাসীর একজন বলেন,
“আমরা নিজের চোখে দেখেছি—সে খুঁটিতে উঠেছিল, কাজ করছিল, হঠাৎ আগুনের মতো কিছু একটা হলো, সে পড়ে গেল। পল্লী বিদ্যুৎ অফিস আগে থেকে জানলে এমনটা হতো না।”
পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের অবস্থান
তবে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির পক্ষ থেকে দেওয়া এক প্রাথমিক বক্তব্যে দাবি করা হয়—মেহেদী হাসান অফিসকে অবহিত না করেই বৈদ্যুতিক লাইনে কাজ করছিলেন, যা নিরাপত্তা বিধি অনুযায়ী চরম অনিয়ম। এ ধরনের যেকোনো কাজের জন্য পূর্বে অফিসে জানানো বাধ্যতামূলক এবং লাইন বিচ্ছিন্ন করেই কাজ করার নিয়ম রয়েছে।
একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান,
“আমরা মর্মাহত, কিন্তু বিষয়টি আমাদের অজ্ঞাতে ঘটেছে। ইলেকট্রিশিয়ান আমাদের কোনো ধরনের অনুমতি না নিয়েই সরাসরি লাইনে কাজ করেন।”
নিরাপত্তা সচেতনতার অভাবই মূল কারণ?
বৈদ্যুতিক কাজ করার সময় সচেতনতা ও পেশাগত নিয়ম মেনে চলা অত্যন্ত জরুরি। শুধুমাত্র অভিজ্ঞতা নয়, প্রয়োজন যথাযথ অনুমতি, নিরাপদ সরঞ্জাম এবং সমন্বয়ের। বিশেষজ্ঞরা বলেন, কোনো লাইনে কাজ শুরুর আগে নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া লাইনে হাত দেওয়া উচিত নয়।
পরিবার ও এলাকাবাসীর দাবি
মেহেদী হাসানের পরিবার এই দুর্ঘটনায় শোকে স্তব্ধ। স্ত্রী, দুই সন্তান ও বৃদ্ধ মা রয়েছেন তার পেছনে। তারা ক্ষতিপূরণ ও তদন্ত দাবি করেছেন।
অন্যদিকে, এলাকাবাসীর একাংশ বিষয়টির সুষ্ঠু তদন্ত ও দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছেন। কেউ কেউ পল্লী বিদ্যুৎ অফিস ঘেরাওয়েরও হুমকি দিয়েছেন যদি দোষীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা না নেওয়া হয়।
এই মর্মান্তিক ঘটনা একটি করুণ বাস্তবতা সামনে নিয়ে আসে—নিরাপত্তা বিধি ও পেশাগত সতর্কতা মানা না হলে এক মুহূর্তেই প্রাণ ঝরে যেতে পারে। দোষী যেই হোক না কেন, তদন্তের মাধ্যমে সঠিক তথ্য বেরিয়ে আসা জরুরি এবং ভবিষ্যতে যাতে এমন ঘটনা না ঘটে, সে জন্য সচেতনতা ও নিয়ম-কানুন কঠোরভাবে পালন নিশ্চিত করা আবশ্যক।

মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Thanks for comments
PBSCOP Admin Panel